কলাবউ
– শক্তি পুরকাইত
আয়নার সামনে দাঁড়ায় তাপসী। নিজেকে দেখে বার বার। শাড়ি পরতে ওকে বেশ মানাচ্ছে। নিজেকে যেন ‘কলাবউ – কলাবউ’ লাগে। সে শাড়িটা কোন রকমে পরে নেয়। ওর জন্য অপেক্ষা করছে গ্রামের অন্য মেয়েরা। সপ্তমীর সকালে ‘কলাবউ’ স্নান করানো দেখবে সে। প্রতি বছর ওর বাবা শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পাবার জন্য গ্রামের এই শান্ত পরিবেশে তার নিজের বাড়িতে এসে পুজো ক’টা দিন কাটায়। আজ নয় বহু দিন ধরে পুজো মানে গ্রামে কাটানো। শহর থেকে গ্রামে পুজো কাটানোর মজাটাই অন্যরকম। কতদিন পর দেখা মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময়। তাপসীর বাবা এটা বেশ করতে পারে। সে শাড়িটা পরে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে ‘কলাবউ’ স্নান করানো দেখতে যায়। তাপসী পিছন ফিরে দেখেনি, যে তার পিছু নিয়েছে ক’য়েকটা বোখাটে ছেলে। সে মেয়েদের সঙ্গে হাসি ঠাট্টা করতে করতে চলে আসে। ওর সাথের মেয়েগুলোকে লক্ষ্য করে হেঁটে গেলেও সামন্য আড়াল হতে, কে যেন মুখে হাত চাপা দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওকে। সে চিৎকার করতে পাচ্ছে না। এই গ্রামের সবাইকে সে চেনে না। শহরে থাকতে থাকতে গ্রামের সংস্কৃতি তার অজানা। তাপসীকে মুখে গামছা বেঁধে ধান জমির ভেতর নিয়ে আসে। একটা একটা বস্ত্র করে খুলে নগ্ন করে। তাপসী বলতে চেষ্টা করে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও’ তার কথা যেন কেউ শুনতে চায় না। বরং হুমকি দেয় চিৎকার করলে গলা টিপে মেরে ফেলবে.. কাদা ধানজমির ভেতর তাপসীর নগ্ন বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের ঢ্যাম -কুড়া – কুড় আওয়াজ। মাইকে শোনা যাচ্ছে চণ্ডীপাঠ ‘ইয়া দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ। তাপসী কাদাজমি থেকে ওঠার চেষ্টা করে, পারে না। এতক্ষণে সবাই পালিয়েছে। সামান্য সামান্য এখনো নিশ্বাস পড়ছে। পায়ের আলতা ধুয়ে গিয়ে লাল হয়ে গেছে জল। সে ‘কলাবউ’ স্নান করানো দেখতে এসে নিজেই ‘কলাবউ’ হয়ে গেল।